ব্র্যাক এর উদ্যোগে “জেনডার অন রেসপনসিভ কোর্ট কেইস ম্যানেজমেন্ট উইথ প্যানেল ল’ইয়ার্স” শীর্ষক ২দিন ব্যাপী এক কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে।
ব্র্যাকের Social Empowerment and Legal protection Programme (SELP) প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ কলাতলীর সাগরপাড়ের ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার যথাক্রমে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওয়ার্কশপে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি (ডিলাক) এবং ব্র্যাকের প্যানেল আইনজীবীরা অংশ নিয়েছেন।
ওয়ার্কশপে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ও নারীর প্রতি সকল বৈষম্য বিলোপ সনদ নিয়ে সমন্বিত প্রশিক্ষণ হয়। অষ্ট্রেলিয়া সরকারের কোর্ট কেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক আইনের উপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশে বাস্তবতার নিরিখে এরকম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়।
এছাড়া, শিক্ষার অধিকার, মতামত দেওয়া ও তথ্য পাওয়ার অধিকার, মুক্ত নির্বাচন ও সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, আইনের চোখে একজন ব্যক্তি হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার, নির্যাতন ও অবমূল্যায়ন থেকে মুক্তির অধিকার, দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার অধিকার, অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ ব্যক্তির মত-আচরণ প্রকাশ করার অধিকার, উপযুক্ত আদালত থেকে বিচার পাওয়ার অধিকার, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার, আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান এবং আইনের আশ্রয় সমানভাবে পাওয়ার অধিকার, অবসর ও বিশ্রাম পাওয়ার অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য শুনানীর অধিকার, নিজস্ব বিশ্বাস ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার, কাঙ্ক্ষিত কাজ পাওয়া ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, সাংস্কৃতিক জীবনে অবাধে অংশ গ্রহনের অধিকার, স্বয়ং সম্পূর্ণ জীবনযাত্রার অধিকার, স্বাধীনভাবে নিজের দেশের যেকোন স্থানে যাওয়া ও বসতি স্থাপন এবং অন্যদেশে যাওয়া ও ফিরে আসার অধিকার, জাতীয়তা পাওয়া এবং পরিবর্তন করার অধিকার, বেআইনি আটক ও বন্দীদশা থেকে মুক্তি লাভের অধিকার, পরিবার, বাড়িতে এবং পত্র যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার, অমানবিক যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার অধিকার, বিয়ে করা এবং পরিবার গঠন করার অধিকার, জীবন ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার সহ আরো বিভিন্ন অধিকার নিয়ে গ্রুপভিত্তিক ও খোলামেলা আলোচনা হয়।
ওয়ার্কশপে গেস্ট রিসোর্স পারসন হিসাবে লেকচার দেন, কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ। গুরুত্বপূর্ণ এ ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন মানবাধিকার কর্মী ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষক অ্যাডভোকেট সানাইয়া ফাহিম আনসারী। ওয়ার্কশপে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন, ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনী সুরক্ষা কর্মসূচীর সমন্বয়ক কামরুজ্জামান রিপন। এছাড়া, অন্যান্যের মধ্যে ব্র্যাকের পরামর্শক দিল আফরোজ আক্তার, প্রশিক্ষণ বিভাগের ব্যবস্থাপক রাশেদা আক্তার মুন্নী, জোনাল ম্যানেজার প্রশান্ত কুমার দে, লিগ্যাল প্রোটেকশন বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার মো: শহীদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মো: আশরাফুল ইসলাম, ডেপুটি ম্যানেজার মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উপভোগ্য ও নান্দনিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কশপের সমাপনী অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কর্মী ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষক অ্যাডভোকেট সানাইয়া ফাহিম আনসারী, সমন্বয়ক কামরুজ্জামান রিপন, ব্র্যাকের প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু ছিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির এর প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, অ্যাডভোকেট শাহ আলম বক্তব্য রাখেন।
ওয়ার্কশপে অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ চৌধুরী (হেলালী), অ্যাডভোকেট আবু ছিদ্দিক, অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ, অ্যাডভোকেট সাকি এ কাউছার, অ্যাডভোকেট ইয়াসমিন শওকত জাহান রোজী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইব্রাহিম, অ্যাডভোকেট আবু ছালেহ, অ্যাডভোকেট জাবেদুল আনোয়ার রুবেল, অ্যাডভোকেট মোঃ আবু ছৈয়দ, অ্যাডভোকেট হামিদা বেগম মুন্নী, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, অ্যাডভোকেট ওয়াহেদা রহমান, অ্যাডভোকেট এ.বি.এম মহীউদ্দীন, অ্যাডভোকেট রিদুয়ান হাসান, অ্যাডভোকেট আয়াতুল্লাহ খোমেনী, অ্যাডভোকেট মোঃ শাহা আলম প্রমুখ অংশ নেন। ব্র্যাকের এ প্রোগ্রাম দেশের ৩১ টি জেলার ২৪০ টি উপজেলায় চলমান রয়েছে বলে ব্র্যাক সুত্রে জানা গেছে।
ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া অ্যাডভোকেট অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী বলেন, ওয়ার্কশপে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী কেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ব্যাপক ধারণা পাওয়া গেছে। নারীর ন্যায্য অধিকার সুরক্ষা, সবসময় সর্বক্ষেত্রে নারীর সর্বোত্তম স্বার্থকে প্রধান্য দেয়া, নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপে সচেতনতা তৈরিতে করণীয় সম্পর্কে আইডিয়া শেয়ার করা হয়। যা, জানার ভান্ডারকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে।
অ্যাডভোকেট সাকি এ কাউছার বলেন, রিসোর্স পারসন, পরিচালক ও সমন্বয়কের অতিকথন বর্জন ও আবেগ পরিহারে সর্বোচ্ছ সতর্কতা এবং শতভাগ পেশাদারীত্ব ছিল লক্ষনীয়। ছিলনা একটুখানিও বিরক্তি কিংবা আলসেমির ছাপ। এককথায় সবকিছু মিলিয়ে ওয়ার্কশপটি ছিল নিঃসন্দেহে একটি পরিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সময়োপযোগী চমৎকার আয়োজন।
অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ বলেন, রিসোর্স পারসনদের সুমধুর ও প্রাঞ্জল উপস্থাপনা, স্পষ্ট ও নান্দনিক বাচনভঙ্গী, হৃদ্যতাপূর্ণ ও বন্ধুসুলভ আচরন, স্বাভাবিক ও সাদামাটা প্রশ্নোত্তর, পরস্পর দারুন বুঝাপড়া, শেখানো ও বোঝানোর প্রানান্ত প্রচেষ্টা, খুনসুঁটি ও হালকা রসিকতাতে ২ দিনের পুরো প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি হয়ে উঠেছে অনন্য, অসাধারণ ও স্মৃতিময়।
অ্যাডভোকেট এ.বি.এম মহিউদ্দিন বলেন, বাস্তবতার নিরিখে তথ্যসমৃদ্ধ কেস ম্যানেজমেন্ট, কেস স্টাডি ও পক্ষসমুহের দায়িত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দেয়া ছিল ওয়ার্কশপের অন্যতম বৈশিষ্ট।
অ্যাডভোকেট মোঃ শাহা আলম বলেন, ওয়াকর্শপে কেস ম্যানেজমেন্ট, তার যথাযথ প্রয়োগ, আইনের ছোটখাঁট ত্রুটি ও অসংগতি, পূর্বেকার বিভিন্ন আইনের অসামজ্জস্যতা বিষয়ে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত ও চুলচেরা আলোচনা হয়।
Leave a Reply