চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যুবদল নেতাকে না পেয়ে তার গ্রাম সর্দার বড় ভাইকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের লালানগরে এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা তৌহিদের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম নুরুল মোস্তফা বজল। তিনি সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মজিবুল হকের পুত্র ও লালানগর গ্রামের সর্দার ছিলেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, দুর্বৃত্তরা নুরুল মোস্তফা বজলের একটি কব্জি পুরো কেটে ফেলা হয়েছে। এরপর মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে। তার মাথায় একাধিক কোপ ও শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
নিহত নুরুল মোস্তফা বজলের ছোট ভাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেন বলেন, রোববার সন্ধ্যায় আমার বড় ভাই বাজারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এরমধ্যে স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডার তৌহিদের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী লোক দুইটি সিএনজি নিয়ে এসে প্রথমে আমার ভাইকে গুলি করে। এরপর তারা ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়। সেখানে এতগুলো লোক ছিল।কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেনি।
ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার ভাই ভালো ব্যবসায়ী ছিলেন। উনার পোল্ট্রি খামার ও মাছের ঘের ছিল। পাশাপাশি তিনি গ্রামের সর্দার ছিলেন। তবে মূলত আমার রাজনীতির কারণে উনি এভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে আমি শহরেই ছিলাম। পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে আমি এখন বেশিরভাগ সময় চট্টগ্রাম শহরে থাকি।
এই যুবদল নেতা বলেন, গতকাল (শনিবার) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ইসমাইল আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, আমার বড় ভাই এলাকায় আওয়ামী লীগের ব্যানার পোস্টার ছিঁড়েছেন। পরে আমি ভাইকে ফোন দিয়ে ব্যাপারটি জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি জানিয়েছেন, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। তখন আমি ভাইকে বলছিলাম, এদের সঙ্গে ঝামেলায় না জড়াতে। আমি উনাকে শহরে চলে আসতে বলেছিলাম। আগামীকাল উনার (সোমবার) শহরে চলে আসার কথা ছিল। তবে তার আগেই তারা ভাইকে এভাবে নিশংসভাবে হত্যা করেছে।
জানা যায়, পেশায় পোল্ট্রি ব্যবসায়ী নুরুল মোস্তাফ বজল তিন কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জনক। তিনি নিজেও স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও সর্বশেষ বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি পদে ছিলেন।
চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে তিনি নিজেও সক্রিয় ছিলেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের ব্যক্তিগত সহকারী ও নগর কৃষকদল নেতা আজম খান বলেন, যুবদল নেতা ইসমাইলের বড় ভাই নুরুল মোস্তফা বজলকে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি প্রার্থী মামুনের ক্যাডার বলে পরিচিত ইসলামের সহযোগী ডাকাত তৌহিদের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে গুলি করে এবং কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা খুনিদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
তবে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন জানান, নিহত বজলদের সঙ্গে তৌহিদের পারিবারিক বিরোধ ছিল। যতটুকু জানি এই কারণেই হত্যাকাণ্ড। আর তৌহিদ একজন চিহ্নিত ডাকাত। তার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে।
Leave a Reply