“প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও এফআইভিডিবির যৌথ উদ্যোগে টেকনাফে “শিশু সুরক্ষার ঝুঁকি ও জনগণের দায়বদ্ধতা” শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন”
DFAT-AHP এর আর্থিক সহায়তায় “সেন্ট্রালিটি অফ প্রটেকশন ইন প্রোট্রাকটেড ক্রাইসেস (সিপিপিসি)” প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর সহায়তায় এবং এফআইভিডিবি এর আয়োজনে “শিশু সুরক্ষার ঝুঁকি এ জনগণের দায়বদ্ধতা” শীর্ষক কর্মশালা, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ২ জুন, ২০২৪ ইং সকাল ১১:০০ ঘটিকার সময় অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ আদনান চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, টেকনাফ। উক্ত কর্মশালার উদ্বোধন ঘোষণা করেন, মোঃ জাকিরুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, টেকনাফ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ ওসমান গণি, অফিসার ইন চার্জ (ওসি) টেকনাফ মডেল থানা । কর্মশালার সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জনাব মোঃ খোরশেদ আলম, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, টেকনাফ। কর্মশালার শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন মোঃ মহিউদ্দিন সর্দার, প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর,এফআইভিডিবি, কক্সবাজার।
উক্ত কর্মশালায় শিশু সুরক্ষা, শিশু আইন, শিশু অধিকার এবং শিশু অধিকার রক্ষায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং এফআইভিডিবি পরিচালিত কার্যক্রমসমূহ তুলে ধরেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর সিবিসিপি স্পেশালিস্ট জনার্দন কর্মকার। পরবর্তীতে মুক্ত আলোচনা সেশনের মাধ্যমে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা মতামত প্রকাশ করেন।
উক্ত কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সিপিপিসি প্রকল্পের প্রজেক্ট সাপোর্ট কোঅর্ডিনেটর, আহমদ উল্লাহ আল আজাদ, কেস ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট খালেদ চৌধুরী, এবং এফআইভিডিবির পক্ষ থেকে সিপিপিসি প্রকল্পের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মোঃ সাহেল আহমেদ, প্র্যাকটিস প্রকল্পের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মোঃ মাহবুবুর রহমান, এমএন্ডই কোঅর্ডিনেটর হামেদ হাসান, এবং অন্যান্য সহকর্মীবৃন্দ।
উক্ত কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, টেকনাফ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, টেকনাফ সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকবৃন্দ, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন ইউপি মেম্বারগণ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, এবং সিবিসিপি কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জনাব মোঃ জাকিরুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, টেকনাফ বলেন- “আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। শিশু সুরক্ষার ঝুঁকি ও জনগণের দায়বদ্ধতা বিষয়ক কর্মশালায় এসে আমরা প্রত্যয় ব্যক্ত করছি যে আমরাও আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করবো ও শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করবো। সবাই মিলে কাজ করলে শিশুর ঝুঁকি কমবে বলে আশা রাখি”। তিনি টেকনাফ উপজেলায় মেয়ে শিশুরা অধিক ঝুঁকিতে আছেন বলেও উল্লেখ করেন। মেয়ে শিশুদের সুরক্ষার প্রতি প্রাধান্য দিয়ে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মোঃ আদনান চৌধুরী বলেন, “শিশুদের নিয়ে কাজ করতে হলে সকলকে মন থেকে কাজ করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণকে সচেতন হতে হবে যেন কোনোভাবেই শিশুরা নির্যাতনের শিকার না হয়। টেকনাফ উপজেলায় শিশু সুরক্ষার কার্যক্রম আরো প্রসারিত করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে”। এছাড়াও টেকনাফ উপজেলায় কিশোর সংশোধন কেন্দ্র এবং শিশু কিশোরদের বিকাশ নিশ্চিতে মাল্টিপারপাস সেন্টার স্থাপনে সর্বাত্নক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোঃ ওসমান গণি, অফিসার ইনচার্জ, টেকনাফ মডেল থানা বলেন, “অন্যান্য উপজেলার তুলনায় টেকনাফে শিশু বিবাহ, শিশু শ্রম, মাদক কারবারী, শিশু-পাচার এই ধরণের ঝুঁকি বেশি লক্ষণীয়, যার পেছনে রয়েছে শিক্ষার অভাব ও বাবা মায়ের অসচেতনতা। এর জন্য আমাদের সকলেরই উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে সমাজে সচেতনতা তৈরি করা, এর বিশেষ একটি প্রক্রিয়া হতে পারে স্কুলগুলোতে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক প্রোগ্রাম আয়োজন করা”। এর পাশাপাশি টেকনাফ পুলিশ সব সময় সকল শিশুর নিরাপত্তা ও ঝুঁকি কমানোর জন্য বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাকে আরও সহযোগিতা করবেন বলে মন্তব্য প্রদান করেন।
মিসেস মুবিনা খাতুন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, বাহারছড়া ইউপি, ওয়ার্ড ৪,৫,৬ বলেন- “আমরা সবসময় শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ, শিশু অধিকার ইত্যাদি নিয়ে সমাজে সচেতনতা তৈরি করি। সরেজমিনে দেখা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পিতা-মাতার অসচেতনতার কারণে শিশুদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন- টেকনাফ উপজেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিশু সুরক্ষার ঝুঁকি, যেমন: বাল্যবিবাহ, মানবপাচার, মাদকাসক্ততা, এবং শিশুশ্রম ইত্যাদি”।
উক্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে শিশু সুরক্ষা নিশ্চিতে এবং ঝুঁকি কমাতে কিছু প্রস্তাবনা প্রদান করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখাযোগ্য কিছু প্রস্তাবনাগুলো হলঃ
– শিশুর পিতামাতাদের শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিতে সচেতন করা
– শিশুদের জন্য ঝুঁকিমুক্ত বিনোদন কেন্দ্র, খেলার মাঠ এবং পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা
– স্কুল পর্যায়ে শিশু-কিশোরদের নিয়ে মনোসামাজিক কর্মশালা আয়োজন করা এবং শিক্ষকদের এ বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা
– উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে শিশু সুরক্ষা বিষয়ক কর্মশালা তৃণমূল পর্যায়ে (ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড) পরিচালিত করা ইত্যাদি।
– শিশু সুরক্ষা বিষয়ক কর্মশালায় শিশুদের সম্পৃক্ত করা।
Leave a Reply